Durga Puja 2023: পুজোয় জড়িয়ে মুসলমান থেকে হিন্দু ব্রাহ্মণ ও অন্ত্যজরাও, যথার্থই সম্প্রীতির শারদোত্‍সব মালদার ঐক্যে

  https://whatsapp.com/channel/0029Va6kD3wDJ6H6nbUIGT2Hএই দুর্গাপুজোয় জড়িয়ে রয়েছেন মুসলমান থেকে শুরু করে হিন্দু ব্রাহ্মণ এমনকী অন্ত্যজরাও । যথার্থই সম্প্রীতির শারদোত্‍সব পালিত হয় মালদা ঐক্যের পুজোয় ।

যে পুজোয় শুধু হিন্দু নয়, অংশ নেয় মুসলিম সমাজ, যে পুজোয় ব্রাহ্মণ্যবাদের সঙ্গে মিশে থাকে অন্ত্যজদের আবেগ, সেই পুজোই যথার্থ উত্‍সবের বার্তা বহন করে । এখানে দেবী শুধু হিন্দুদের নয়, মুসলমানদেরও মা । শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলাও যেন একটু থমকে দাঁড়ায় 'মালদা ঐক্য' পুজোমণ্ডপের মাথায় । কাশবনের বাতাস ভেসে আসে ইট-কংক্রিটের শহরে । শুধু দুর্গাপুজোই নয়, ঈদ-মহরমও এখানে কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের নয় । সবই বাঙালির উত্‍সব, বাঙালির পরব । 


ইংরেজবাজার পৌরসভার 6 নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পিরোজপুর । মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা । এখানেই বাস শহরের অধিকাংশ হরিজন সম্প্রদায়ের । তাঁরা হিন্দু । কিন্তু তথাকথিত উচ্চবর্ণের দুর্গাপুজোয় তাঁদের অংশগ্রহণের অধিকার পদে পদে ঠোক্কর খায় । এই মানুষগুলোই একদিন আর্জি নিয়ে গিয়েছিল মুসলিম মহল্লার কিছু যুবকের কাছে । দুর্গাপুজো করতে হবে । যে পুজোয় ধর্ম-বর্ণের কোনও ভেদাভেদ থাকবে না । আর্জিটা নাড়িয়ে দিয়েছিল ওই মুসলমান যুবকদের মন । তখনই দুই সম্প্রদায় কোমর কষে শারদীয়া উত্‍সব পালনে নেমে পড়ে । এলাকাতেই ছিল একটি ছোট ট্যাক্সি স্ট্যান্ড । সেখানে ছোট্ট ফাঁকা জায়গায় 2007 সালে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে ফেলেন মহল্লার বাসিন্দারা । ধীরে ধীরে পুজোর কলেবর বাড়ে । এখন ওই জায়গায় তাঁরা সুদৃশ্য দুর্গামন্দিরও নির্মাণ করে ফেলেছেন । পুজোর নাম 'মালদার ঐক্য'।


পুজো কমিটির সভাপতি শংকর দত্ত বলছেন, "শুধু ধর্ম নয়, এখানে ধর্মের সঙ্গে বর্ণও মিলেমিশে রয়েছে । ছোট থেকে আমরা সবাই একসঙ্গেই এখানে মানুষ হয়েছি । এই পুজোয় যেমন হিন্দু-মুসলমান অংশ নেয়, তেমনই ব্রাহ্মণ-কায়স্থ-হরিজনরাও পুষ্পাঞ্জলি দেয় । শুধু এই শহরে নয়, এমন সম্প্রীতির ছবি গোটা রাজ্যেই ব্যতিক্রমী । বছর বিশেক আগে গোটা দেশে যখন একটা সাম্প্রদায়িক সংকট দেখা দিচ্ছিল, তখনই আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নিই । 2007 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা এই সম্প্রীতি বজায় রেখে চলছি । শুধু দুর্গাপুজো নয়, কালীপুজো, ঈদ, মহরম সব উত্‍সব আমরা এভাবেই পালন করে থাকি । এটা শুধু কথার কথা নয় । যে কোনও উত্‍সবে এখানে এলেই যে কেউ সেই ছবি দেখতে পাবে । শহরের প্রায় সব জায়গা থেকেই মানুষ এখানে পুজো দেখতে আসেন । আমাদের এই উদ্যোগকে মালদার মানুষ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে । আর আমাদের সংস্থার নামের সঙ্গেই আমাদের বার্তা জড়িয়ে রয়েছে ।"


278 বছরের পুরনো দেব সরকার বাড়ির পুজো, সপ্তমী-দশমী হয় 131 কিলোগ্রাম চালের নৈবেদ্য


পুজো কমিটির সম্পাদক ববি আহমেদ জানান, "17 বছর ধরে আমাদের দুর্গাপুজো চলছে । মুসলিম ধর্মে মূর্তি পুজোর প্রচলন নেই । আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্যই দুর্গাপুজো করে থাকি । শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বে এখন সাম্প্রদায়িক সংকটের যে বাতাবরণ চলছে, সেই আবহে সম্প্রীতির বার্তা চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া খুব প্রয়োজন । সেটাই আমাদের লক্ষ্য । আমাদের এখানে হিন্দুদের নিচু সম্প্রদায়ের মানুষও ব্রাহ্মণদের মতো সম্মান পান । শুধু দুর্গাপুজোতেই নয়, কালীপুজো, ঈদ, মহরম-সহ সমস্ত উত্‍সবই একসঙ্গে পালন করে থাকি । উত্‍সব আনন্দের । ধর্মের গণ্ডি দিয়ে সেই আনন্দকে আটকে রাখা যায় না । প্রচুর মানুষ আমাদের পুজোয় অংশ নেন । এ বার আমাদের একটু আর্থিক সংকট রয়েছে । তাই পুজোর বাজেটও কমাতে হয়েছে । সেই বাজেট ধরা হয়েছে 2 লাখ 30 হাজার টাকা । সব সম্প্রদায়ের মানুষের চাঁদাতেই পুজো হয় । টাকার অভাবে এ বার আমরা অন্যান্য বারের মতো বস্ত্র বিতরণ কিংবা প্রসাদ বিতরণের মতো কিছু করতে পারছি না । তবে সরকারি সব নিয়ম মেনেই আমরা পুজো করছি । ইচ্ছে ছিল, চতুর্থীতে পুজোর উদ্বোধন করব । কিন্তু বিরূপ প্রকৃতির জন্য তা সম্ভব হবে না । স্থানীয় দুই সম্প্রদায়ের বয়স্ক মানুষজনই আমাদের পুজোর উদ্বোধন করবেন ।"


এলাকার বাসিন্দা হরিজন সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধি শিবা হরিজন জানাচ্ছেন, "আগে আমরা দুর্গাপুজোয় অংশ নিতে পারতাম না । এখন নিজেরা পুজো করি । এলাকার মুসলিম যুবকরাই আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে । আমরা চাই, এমন পুজো দিকে দিকে চালু হোক । তাহলে মানুষে মানুষে আর ভেদাভেদ থাকবে না । আল্লা আর ঈশ্বরের মধ্যে কোনও পার্থক্য থাকবে না ।"https://whatsapp.com/channel/0029Va6kD3wDJ6H6nbUIGT2H


Comments

Popular posts from this blog

শুটিং ফ্লোরে রণবীরকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন আনুশকা

মাঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নামছেন শুভমন গিল

পুজোয় নতুন শাড়ি না পেয়ে স্বামীর উপর অভিমান, কীটনাশক খেলেন কৃষ্ণনগরের বধূ!